সুমিতা দেবী (জন্মঃ ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ - মৃত্যুঃ ৬ জানুয়ারি, ২০০৪)
বাংলাদেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র শিল্পী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয়
অভিনেত্রী ছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের) মানিকগঞ্জ
জেলায় তার জন্ম। প্রকৃত নাম হেনা ভট্টাচার্য্য। চলচ্চিত্রকার ফতেহ লোহানী
আসিয়া ছবিতে হেনা নাম পাল্টিয়ে সুমিতা দেবী রাখেন। ধর্ম্মান্তরিত হয়ে
তার নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জহির
রায়হান ছিলেন তার স্বামী।
সুমিতা দেবী
| জন্ম | হেনা ভট্টাচার্য্য ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ মানিকগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত |
|---|---|
| মৃত্যু | ৬ জানুয়ারি, ২০০৪ ঢাকা, বাংলাদেশ |
| অন্য নাম | নিলুফার বেগম |
| পেশা | অভিনেত্রী, চিত্র পরিচালক |
| দাম্পত্য সঙ্গী | অমূল্য লাহিড়ী জহির রায়হান |
| সন্তান | ২ জন (অনল রায়হান, বিপুল রায়হান ) |
ব্যক্তিগত জীবন
ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সুমিতা দেবী। তখন তার নাম ছিল হেনা ভট্টাচার্য্য। অমূল্য লাহিড়ী
নামীয় এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হলেও পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে
বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের পর বাংলাদেশের
চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ ও প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি জহির রায়হানের সাথে পরিচিত হন। সুমিতা দেবী পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত হন ও তার নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম। অতঃপর তিনি জহির রায়হানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৬১ সালে। তাদের সংসারে দু'টো পুত্র সন্তান রয়েছে। অনল রায়হান তাদেরই একজন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার ফতেহ লোহানী কর্তৃক আসিয়া ছবিতে নাম পাল্টিয়ে সুমিতা দেবী রাখা হয়েছিল। বিয়ের পরও চলচ্চিত্র শিল্পে পূর্বের সুমিতা দেবী নাম নিয়েই পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সক্রীয় কর্মী ছিলেন সুমিতা দেবী।
২০০০ সালে তিনি আশিক মোস্তফা পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ফুলকুমার ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন।
চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ
১৯৫০ দশকের শেষ দিকে সুমিতা দেবী ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প বা ঢালিউডের অন্যতম নায়িকা ছিলেন। আসিয়া ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবনের শুভ সূচনা ঘটে তার। তার পরবর্তী ছবি ছিল আকাশ আর মাটি। উভয় ছবিরই পরিচালক ছিলেন ফতেহ লোহানী।
সুমিতা দেবী উক্ত ছবির নাম ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করে চিরস্মরণীয় হয়ে
রয়েছেন। আসিয়া ছবিটি ১৯৬০ সালের শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেছিল।
সুমিতা দেবী তার চলচ্চিত্র জীবনে প্রায় চার দশক কাল সময় অতিবাহিত
করেছিলেন। নায়িকার প্রধান চরিত্রে অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায়
পঞ্চাশটি। বাংলা ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন
তিনি। এছাড়াও, শতাধিক চলচ্চিত্রে সহ-নায়িকা কিংবা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়
করেন। স্মরণীয় চলচ্চিত্র হিসেবে সুমিতা দেবী এ দেশ তোমার আমার ছবিতে
অভিনয় করেন। ছবিটি ১৯৫৯ সালের যা আসিয়া ছবির পূর্বে মুক্তি পায়।
কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাচের দেয়াল, এই তো জীবন, দুই দিগন্ত, বেহুলা,
আগুন নিয়ে খেলা, অভিশাপ, ওরা এগারো জন, সুজন সখী, আমার জন্মভূমি ইত্যাদি
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বাংলাদেশ বেতার (সাবেক রেডিও বাংলাদেশ), বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং মঞ্চ নাটকেও
সমান তালে অংশগ্রহণ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুমিতা দেবী ৫টি
চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। সেগুলো হলো - আগুন নিয়ে খেলা, মোমের আলো,
মায়ার সংসার, আদর্শ ছাপাখানা এবং নতুন প্রভাত।
চলচ্চিত্রের তালিকা
| ক্রমিক নং | চলচ্চিত্রের নাম | অভিনয়ে | পরিচালক | মুক্তিলাভের তারিখ |
| ১। | এ দেশ তোমার আমার | আনিস, সুমিতা দেবী | এহতেশাম | ১ জানুয়ারি, ১৯৫৯ |
| ২। | আকাশ আর মাটি | আমিন, প্রবীর কুমার, সুমিতা দেবী | ফতেহ লোহানী | ২৪ জুলাই, ১৯৫৯ |
| ৩। | মাটির পাহাড় | সুমিতা দেবী | ১৯৫৯ | |
| ৪। | আসিয়া | শহীদ, সুমিতা দেবী | ফতেহ লোহানী | ১৯৬০ |
| ৫। | কখনো আসেনি | আনিস, সুমিতা দেবী | জহির রায়হান | ২৪ নভেম্বর, ১৯৬১ |
| ৬। | সোনার কাজল | খলিল, সুমিতা দেবী | ১৯৬২ | |
| ৭। | সঙ্গম (উর্দু) | খলিল, সুমিতা দেবী | জহির রায়হান | ১৯৬৩ |
| ৮। | কাচের দেয়াল | আনোয়ার হোসেন, সুমিতা দেবী | ১৯৬৩ | |
| ৯। | দুই দিগন্ত | আনোয়ার হোসেন, সুমিতা দেবী | ১৯৬৪ | |
| ১০। | ধূপ ছাঁও (উর্দু) | এজাজ, সুমিতা দেবী | ১৯৬৪ | |
| ১১। | এই তো জীবন | রহমান, সুমিতা দেবী | ১৯৬৪ | |
| ১২। | বেহুলা | সুমিতা দেবী | জহির রায়হান | ১৯৬৬ |
| ১৩। | অভিশাপ | সুমিতা দেবী | ১৯৬৭ | |
| ১৪। | আগুন নিয়ে খেলা | সুমিতা দেবী | ১৯৬৭ | |
| ১৫। | অশান্ত প্রেম | হায়দার শফী, সুমিতা দেবী | ১৯৬৮ | |
| ১৬। | জনম জনম কি পিয়াসি | সুমিতা দেবী | ১৯৬৮ | |
| ১৭। | আমার জন্মভূমি | সুমিতা দেবী | আলমগীর কুমকুম | ১৯৭৩ |
| ১৮। | ওরা এগারো জন | সুমিতা দেবী | চাষী নজরুল ইসলাম | ১৯৭২ |
| ১৯। | সুজন সখী | সুমিতা দেবী | খান আতাউর রহমান | ১৯৭৬ |
| ২০। | চিত্রা নদীর পারে | সুমিতা দেবী | তানভীর মোকাম্মেল | ১৯৯৯ |
| ২১। | ফুলকুমার (স্বল্পদৈর্ঘ্য) | সুমিতা দেবী | আশিক মোস্তফা | ২০০২ |
সাফল্য গাঁথা
| ক্রমিক নং | বিবরণ | সাল |
| ১। | পাকিস্তানের সমালোচক পুরস্কার | ১৯৬২ |
| ২। | নিগার পুরস্কার (কাচের দেয়াল) | ১৯৬৩ |
| ৩। | বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার | |
| ৪। | বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টার সমিতি পুরস্কার | |
| ৫। | আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার | ২০০২ |
| ৬। | জনকণ্ঠ গুণীজন এবং প্রতিভা সম্মাননা | ২০০২ |
| ৭। | চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটি পুরস্কার | ২০০২ |
মৃত্যু
সুমিতা দেবী ৬ জানুয়ারি, ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধজীবী গোরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

0 comments:
Post a Comment